সোমবার ৩রা সফর, ১৪৪৭ হিজরি ২৮শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আল্লাহ পাকের তাওফীক একটি স্বতন্ত্র নিয়ামত

আমরা আল্লাহ পাকের অসীম নিয়ামতের দ্বারা পরিবেষ্টিত, খোদায়ী নিয়ামতের বারী সর্বদা
বর্ষিত হচ্ছে আমাদের উপর। তাঁর তওফীক ছাড়া কেউ যেমন ভাল কর্ম স¤পাদন করতে
পারেনা, তেমনি গুনাহ থেকেও বাঁচতে পারেনা।

গভীর ভাবে চিন্তা করলে আমাদর বুঝে আসাবে যে, ভাল কাজের মাধ্যমে আল্লাহ পাকের
নৈকট্য আর্জন করা এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থেকে আল্লাহ তা‘আলার রেজামন্দী তালাশ
করা-এসবের কোনটিই আল্লাহ পাকের তওফীক ছাড়া আদৌ সম্ভব নয়। পকৃতপক্ষে তওফীক
নামক নেয়ামত যদি আমরা না পেতাম, তাহলে ভাল আমলও করতে পারতাম না, এবং
মন্দকাজ থেকে বাঁচতে পারতাম না।

তওফীক এমন একটি নেয়ামত যার পিছে হাজারও নেয়ামত কাতার বেধে দাঁড়িয়ে আছে। তাই
আল­াহ রব্বুল আলামীন এরশাদ করেনঃ

وان تعدوا نمعة الله لا تحصوها

আর যদি তোমরা আল্লাহ পাকের নেয়ামতরাজি গণনা করতে চাও, তবে তা কোনদিন শেষ
করতে পারবেনা। এখানে অনেকের মনে একটি প্রশ্ন জাগতে পারে যে – যেহেতু ‘তওফীক’
আল্লাহ পাকের একটি নেয়ামত, বিধায় আল্লাহ তা‘আলা যাকে এ নেয়ামত দিবেন কেবল
সে-ই ভাল কাজ করতে পারবে এবং মন্দ কাজ থেকে বেঁচে থাকতে পারবে। আর যাকে এ
নেয়ামত দিবেন না, সে ভাল কাজও করতে পারবে না এবং মন্দ কাজ থেকেও বিরত থাকতে
পারবে না। তা হলে মন্দ কর্ম করার ক্ষেত্রে বান্দার দোষ কোথায়? কারণ আল­াহ পাক তো তাকে
মন্দ কাজ থেকে বাঁচার তওফীক-ই দেন নাই? কথাটি এমন দ্বাড়ায় যে-যেমন নাচাও তেমন
নাচে, পুতুলের কি দোষ?

এ প্রশ্নের উত্তর প্রদানের পূর্বে আমাদের একটা কথা স্বরণ রাখা দরকার। তাহলো যে, নেয়ামত
পায় কারা, আর পায়না কারা? আল্লাহ পাকের নেয়ামত তো তারাই পায় যারা ছোট্ট থেকে ছোট্ট
নিয়ামত নিয়ে চিন্তা করে,এবং যারা নেয়ামত নিয়ে চিন্তা-ফিকির করে তারা অবশ্যই নিয়ামত
দাতার খোঁজ পায়। আর যখন কোন ব্যক্তি দাতার খোঁজ পাবে তখন সর্বদাই তাঁর কাছে পার্থনা
করবে। আর এমন দাতার কাছে কেইবা চাইবে না, যে দাতা নিজেই ঘোষনা দেন যে, তোমরা
আমার কছে চাও আমি দেব।

ہرگھڑی دینے کو تو تیار ہے ٭جو نا مانگے اس سے تو بیزار ہے

তিনি তো সদাসর্বদা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। আর তাঁর কাছে যারা চায়না তাদের প্রতি তিনি
বেযার হন।

আর যারা গাফেল, তারা কখনও আল­াহ পাকের নেয়ামত নিয়ে কোন চিন্তা-ফিকির করেনা।
নেয়ামত নিয়ে চিন্তা না করার কারণে, তারা দাতারও খোঁজ পায়না, তাই তারা দাতার কাছে
কোন কিছু চায়ও না। মদ্দা কখা হল, যারা দাতার কাছে চায় তারা পায়, আর যারা দাতার
কাছে চায়না তারা পায়না। এমন না যে, তিনি দেন না তাই পায়না,বরং চায়না তাই পায়না।
যারা চায় তারা পায়। যারা চায়না তারা পায়না। তহলে এবার কথা পরিস্কার হয়ে গেল যে, দোষ
গ্রহীতার পক্ষ থেকে; দাতার নয়।

হে আল­াহ! আমরা সর্বদা তোমার অসীম নেয়ামতে সাগরে ডুবে আছি। এই ক্ষুদ্র জীবনে
তোমার নেয়ামতের শোকর আদায় করতে আমরা অক্ষম, এ কাজ আমদের দ্বারা সম্বভ নয়।
হে আল­াহ! আমাদের ক্ষমা কর।

বর্ণিত আছে, আল­াহ পাক হযরত দাউদ (আ.) কে শোকর গুজারীর নির্দেষ দিয়েছিলেন।
হযরতহ দাউদ আলাইহিস সালাম বিনীতভাবে আরজী পেশ করলেন, “হে আমার প্রতিপালক!
আপনার শুকর গুজারী আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি এ ব্যাপারে অক্ষম।” আল্লাহ পাক
জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি আমর শোকর আদায় করতে অক্ষম কেন?” দাউদ আলাইহিস সালাম
আরজ করলেন, “হে আমার প্রতিপালক! যদি আমি আপনার শোকর আদায় করতে চাই তবে
আপনার তওফীক ব্যতীত তা সম্ভব নয়। আর আপনার তওফীক একটি স্বতন্ত্র নেয়ামত। এ
নেয়ামতের শোকর আদায় করাও আমার কর্তব্য। এভাবে নেয়ামতের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি
পেতে থাকবে। এ জন্য আপনার শোকর আদায় করতে আমি অক্ষম।” তখন আল্লাহ রব্বুল
আলামীন বললেন, “হে দাউদ! তুমি উপলব্ধি করতে পেরেছ যে আমার শোকর গুজারী করতে
তুমি আক্ষম, এ অক্ষমতার উপলব্ধিই আমার শোকর গুজারী।