পবিত্র কোরআনে আদম আ.এর পাশাপাশি আম্মাজন হাওয়ার আ.এর নাম কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। এর কারণে তাফসীরকারগণ বলেন: যারা সম্ভ্রান্ত তারা কখনও নারীর নাম প্রকাশ করে না। কারণ এটাও একধরণের বেহায়াপনা, তাই প্রয়োজন ছারা নারীর নাম প্রকাশ করার পক্ষে ইসলাম না।
قال القرطبي ـ رحمه الله ـ في تفسير قوله تعالى : يا أهل الكتاب لا تغلوا في دينكم ولا تقولوا على الله غير الحق إنما المسيح عيسى ابن مريم رسول الله) … النساء( ১৭১
الثانية :لم يذكر الله عز وجل امرأة وسماها باسمها في كتابه إلا مريم ابنة عمران ، فإنه ذكر اسمها في نحو من ثلاثين موضعاً لحكمة ذكرها بعض الأشياخ ، فإن الملوك والأشراف لا يذكرون حرائرهم في الملإ ، ولا يبتذلون أسماءهن ، بل يكنون عن الزوجة بـ : العرس والأهل والعيال ونحو ذلك ، فإن ذكروا الإماء لم يكنّوا عنهن ولم يصونوا أسماءهن عن الذكر والتصريح بها ، فلما قالت النصارى في مريم ما قالت وفي ابنها صرح الله باسمها ولم يكنِّ عنها بالأموّة والعبودية التي هي صفة لها وأجرى الكلام على عادة العرب في ذكر إمائها.
( الجامع لأحكام القرآن : ৬ / ১৬ ) .
অন্য এক জায়গায় আল্লাহ তাআলা বলেন।
وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ)
উক্ত আয়াতের তাফসীরে তাফসীরবেত্তাগণ প্রয়োজন ছাড়া বর্কা পরে বাহিরে যাওয়াকে নিষেধ করেছেন, কারন বর্কাতেও নারীর সৌন্দর্য প্রকাশ পায়। কোরআনের তাফসীর থেকে বোঝা যায়- ১.প্রয়োজন ছাড়া নারী তার বর্কা প্রদর্শন করবে না।২. প্রয়োজন ছাড়া নারী তার নাম বলবে না বা প্রকাশ করবে না।
নারীর কোমল কন্ঠ ও পায়ের শব্দ:
সার কথা, নারীকে ইসলাম সর্বদা সতর্ক থাকতে বলেছে, যেন তার কথার আওয়াজ ও পায়ের শব্দ পর্যন্ত কোন পরপুরুষ শুনতে না পারে। এতে নারীর সম্ভ্রম অক্ষুন্ন থাকবে ও সে শ্লীলতাহানীর স্বীকার হবে না।
কোরআন নারীকে সর্বপরি সম্মান দিয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে:
إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلاً مَّعْرُوفًا
যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর , তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না। ফরে সেই ব্যক্তি কুবাসনা করে, যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে। (সূরা,আহযাব; ৩২)
আরো ইরশাদ হচ্ছে:
وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ
তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারনা না করে।(সূরা,আন্নুর;৩১)
নারীকে ইসলাম এত সম্মান দিয়েছে যে,নারীর ছায়া পর্যন্ত দেখার অনুমতি কাউকে দেয়া হয়নি।
ফিক্হ ও ফাতাওয়ার কেতাবে উলামায়ে কেরাম বলেন- কোন হাউজের মধ্যে পানিতেও যদি কোন নারীর ছায়া দেখা যায়, তা হলে সে ছায়া দেখাও বৈধ হবে না, কারণ এর দ্বারাও পুরুষ তার দিলের খায়েশ পুরা করতে পারে এবং তার সামনে অশ্লীলতার দ্বার উন্মোচন হতে পারে।
গতকাল ও আজকের লেখা থেকে আমরা যা পেলাম: নারী তার সম্পর্কীয় কোন কিছু প্রকাশ করতে পারবে না, কারণ একজন পরপুরুষের কাছে নারীর সবকিছুই ভালো লাগতে পারে । যেমন নারীর ১. বর্কা ও বর্কার ছবি।২. নারীর পায়ের আওয়াজ। ৩. নারীর কোমল কন্ঠ। ৪. নারীর ছায়া ও নারীর নাম, ইত্যাদি ।
মোমেন নারীর ইজ্জতের কত দাম!
পূর্বের আলোচনা থেকে আমাদের এ কথা বুঝে এসেছে যে, নারী তার কোন প্রকার সৌন্দর্য বেগান পুরুষের সামনে প্রকাশ করবে না। এটিই কোরআনুল কারীমের দিপ্ত ঘোষণা। কারণ যাদে মধ্যে এক প্রকারের যৌনরোগ আছে, তাদের সামনে যদি বেগানা নারীর সৌন্দর্য প্রকাশ পায়, তাহলে তারা তাদের উপভোগ করারা যল্পনা-কল্পনা করে। অন্তরের খবর আমরা জানি না। সারা দুনিয়ার মানুষের অন্তর্যামী আল্লাহ তাআলা জানেন; তাই তিনি জানিয়ে দিয়েছেন যে, কোন বেগানা পুরুষ যদি কোন বেগানা নারীর সৌন্দর্য দেখে, তাহলে তাকে উপভোগ করার যল্পনা-কল্পনা করে, আর এর দ্বারা নারী অপমানিত হয়। আর একজন মোমেন নারীর ইজ্জত আল্লাহ তাআলার নিকট অনেক বড়। একজন মোমেন নারীর সম্মানের হানি হোক, সে অপমানিত হোক এটা আল্লাহ তাআলা কখনও চান না, তাই নারীকে সম্মানের সর্বোচ্চ আসমে সমাসীন করাতে তার সৌন্দর্যকে বেগানা পুরুষদের সামনে প্রকাশ করতে নিষেধ করেছেন। হে নারী তোমাকে তুমি চিনতে শিখো।
নারীর সৌন্দর্য দেখবে কে?
আর সাক্ষাত করবে কাদের সাথে।
নারী তার স্বামী ছাড়া আর কারো সামনে তার সৌন্দর্য প্রকাশ করতে পারবে না। নারীর যাবতীয় সৌন্দর্য দেখার একমাত্র অধিকার রয়েছে তার স্বামীর। তেমনি সে তার স্বামী ছাড়া আর কারো সামনে ছতরও খুলতে পারবে না। এ আদেশ মানা ছাড়া নারী তার জীবনে কস্মিনকালেও সুখ, শান্তি ও সফলতার মুখ দেখবে না। সার কথা নারীর সৌন্দর্য দেখার মানুষ শুধু একজন, তিনি হচ্ছেন নারীর স্বামী। বোঝা যায় বিবাহের পূবে নারীর সৌন্দর্য দেখার কেউ নেই। হাঁ, নারী যাদের সাথে দেখা-সাক্ষাত করতে পারবে তাদের একটা তলিকা কোরআন পেশ করেছে। ইরশাদ হচ্ছে:
)حُرِّمَتْ عَلَيْكُمْ أُمَّهَاتُكُمْ وَبَنَاتُكُمْ وَأَخَوَاتُكُمْ وَعَمَّاتُكُمْ وَخَالَاتُكُمْ وَبَنَاتُ الْأَخِ وَبَنَاتُ الْأُخْتِ وَأُمَّهَاتُكُمْ اللَّاتِي أَرْضَعْنَكُمْ وَأَخَوَاتُكُمْ مِنْ الرَّضَاعَةِ وَأُمَّهَاتُ نِسَائِكُمْ وَرَبَائِبُكُمْ اللَّاتِي فِي حُجُورِكُمْ مِنْ نِسَائِكُمْ اللَّاتِي دَخَلْتُمْ بِهِنَّ فَإِنْ لَمْ تَكُونُوا دَخَلْتُمْ بِهِنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ وَحَلَائِلُ أَبْنَائِكُمْ الَّذِينَ مِنْ أَصْلَابِكُم(
উল্লিখিত আয়াতের আলোকে যে সকল পুরুষের সাথে নারী দেখা-সাক্ষাত করতে পারবে তাদের তালিকা নি¤েœ দেয়া হল-
১. আপন পিতা এবং সৎপিতা। (মাতার স্বামী)
২. নানা, নানার পিতা এভাবে উর্ধ্বতন আত্মীয়গণ।
৩. দাদা, দাদার পিতা এভাবে তদুর্ধ্ব পিতাগণ।
৪. পুত্র, দৌহিত্র, প্রদৌহিত্র তদ্রƒপ, পৌত্র, প্রপৌত্র এভাবে তদনি¤œ সকল স্তরের পুত্র।
৫. ভাই(সহোদর, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয়)
৬. চাচা (আপন, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয়)
৭. মামা (আপন, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয়)
৮. ভ্রাতুষ্পুত্র (আপন, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয়) অনুরূপ তাদের পুত্র ও তদনি¤œ পুত্রগণ।
৯. বোনের ছেলে (ভাগ্নে) আপন, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় অনুরূপ তাদের ছেলে ও তদনি¤œ ছেলেগণ।
১০. দুধ পিতা।
১১. দুধ ভাই।
১২. স্বামীর পিতাবর্গ (শ্বশুড়),দাদা, তদুর্ধ্ব পিতাগণ। অনুরূপ স্বামীর দাদা ও তদুর্ধ্ব পিতা সমূহ।
১৩. স্বামীর পুত্র (পূর্বের স্ত্রী থেকে), পুত্রের পুত্র ও তদনি¤œ সকল পুত্র।
১৪. মেয়ের স্বামী, পৌত্রীর স্বামী এবং তদনি¤œ স্তরের সকল পৌত্রীর স্বামীগণ। অনুরূপ দৌহিত্রীর স্বামী এবং তদনি¤œ স্তরের দৌহিত্রীর স্বামীবর্গ। উপরোক্ত পুরুষ আত্মীয়গণ ছাড়া অন্যান্য পুরুষ আত্মীয়-অনাত্মীয়র সাথে পর্দা করা জরুরি। যেমন ফুফা, খালু, চাচাত, ফুফাত, মামাত ও খালাত ভাই, ভাতিজীর স্বামী, ভাগিনীর স্বামী, দুলাভাই, দেবর ইত্যাদি।
সূরা নিসা (৪) : ২৩;
আহকামুল কুরআন,জাসসাস ২/১৩২,১২৯; মাআরিফুল কুরআন ২/৩৫৮;
আননুতফা ফিল ফাতাওয়া ১৬৩;
ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৭৩;
রদ্দুল মুহতার ৩/২৮
নারী ঘরের বাইরে যেতে পারবে কখন।
নারীদের প্রতি কোরআনের আদেশ:
وقرن في بيوتكن ولا تبرجن تبرج الجاهلية الأولى
‘হে মুসলিম নারীরা ( বিশেষত নবীর বিবিরা)’ তোমরা তোমাদের গৃহেই অবস্থান করবে, প্রথম জাহেলী যুগের নারীদের ন্যায় নিজেদের প্রদর্শন করোনা। (সূরা আহযাব:৩৩) পর্দার দুইটি স্তর আছে, প্রথম স্তরের পর্দা হচ্ছে নারীরা নিজঘরেই অবস্থান করবে। ঘরের বাইরে যেতে পারবে না। তবে আয়াতের তাফসীরে তাফসীরকারগণ বলেন: তিন কারণে নারী ঘরের বাইরে যেতে পারবে ছয়টি শর্ত মেনে ১. কোন প্রকার খুশবু লাগাতে পারবে না। ২. আওয়াজ হয় বা বাজে এমন গহনা পরবে না। ৩.রাস্তার কেনারা ধরে চলবে। ৪.কোন প্রকার ভিড়ের মধ্যে প্রবেশ করবে না। ৫. আস্তে কথা বলবে। ৬.পর্দার সহিত যাবে অর্থাৎ, এমন একটি চাদর মাথার উপর টেনে দিবে যা পুরা শরীর ঢেকে নেয়।
যে তিনটি কারণে ঘরের বাইরে যেতে পারবে সেগুলোর মধ্য হতে প্রথম হচ্ছে, ব্যক্তিগত দরকারে। যেমন কোন নারী যদি অসুুস্থ হয় আর বসবাসের ঘরে চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে যেখানে গেলে তার চিকিৎসার সুব্যবস্থা হয় সেখানে যেতে পারবে। অনুরূপভাবে নারী যদি তার মা-বাবাকে দেখতে চায়, অথবা তার ভাই, বোন, চাচা, খালা, ফুফুকে দেখতে চায তাহলে যেখানে এনারা থাকে সেখানে সে যেতে পারবে। দ্বিতীয় কারণ: ধর্মীয় দরকার হলে- যেমন নারী যদি বসবাসের ঘরে অবস্থান করে ইসলামী জীবন-যাপনের উপযোগী শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ না পায় তাহলে যেখানে গেলে ইসলামী জীবন-যাপনের উপযোগী শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ যেখানে গেলে পাবে সেখানে যেতে পারবে। তৃতীয় কারণ: অর্থিক সংকটে। তবে স্মরণ রাখা দরকার যে, চার প্রকারের লোককে বিনা শ্রমে ভাতা দিয়ে লালন-পালন করা সরকারের দায়িত্ব।১. অসহায় শিশু, যাদের লালন-পালনের কোন অভিভাবক নেই।২. অসহায় বৃদ্ধ। ৩. অসহায় যুবক যারা পঙ্গু অথবা এমন জটিল রোগে আক্রান্ত যে, সে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।৪. সেই সমস্ত যুবতী, যাদের লালন-পালনের কোন উপায় নেই। কিন্তু তারা কোন জটিল রোগে আক্রান্তও নয়, আবার পঙ্গুও নয়। আবার তাদের শারীরে কাজ করার মত শক্তিও আছে। সেই সমস্ত যুবতী নারীকে তাদের ভরণ-পোষণের কোন উপায় না থাকার কারণে তাদেরকে বিনাশ্রমে ভাতা দিয়ে লালন-পালন করতে হবে, খাটানো যাবে না। কারণ তারা নারী।
নারীর যোগ্যতা
…………………….
নারীকে ইসলাম দিয়েছে সর্বাধিক অধিকার ও মর্যাদা এবং সমাসীন করেছে তাকে সম্মানের সর্বোচ্চ আসানে। নারীর এ ইজ্জত ও সম্মানের পেছনে তার জাগতিক যোগ্যতা ও দক্ষতার লেশমাত্র কৃতিত্ব নেই। তবে হাঁ, নারীকে মহান আল্লাহ পাক ‘মা’ হওয়ার যোগ্যতা দিয়েছেন। সাথে সাথে স্বামীর মনজয় করার ক্ষমাতও তাকে দিয়েছেন। তবে উল্লিখিত দুটি বিষয়ে নারীর যোগ্যতা ও দক্ষতার মূল্যায়ন আবশ্যই ইসলামে রয়েছে। এদুটি বিষয়ে যদি কোন নারী যোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জন করতে পারে, তাহলে সফলতা তার পায়ে এখনও চুম্বন করবে। প্রক্ষান্তরে কোন নারীর মধ্যে যদি যাবতীয় যোগ্যতা ও দক্ষতার মিলন ঘটে আর উল্লিখিত দুুুটিতে পচন ধরে, তাহলে ব্যর্থতার গ্লানি তাকে গ্রাস করে নিবে। আপনার আশেপাশে চোখ তুলে একবার তাকান, দেখবেন হাজারো নারী, যাদের জাগতিক যোগ্যতার ও দক্ষতার কোন অভাব নেই কিন্তু পারিবারিক জীবনে তার কোন সুখ-শান্তি নেই। এখানে অবশ্য আর একটি ভুল আমাদের মাঝে আছে, তা হচ্ছে, নারীর জীবনের লক্ষ্য কি হবে? এ শিক্ষা আমরা তাদের কখনও দেই না। “নারীর জীবনের লক্ষ্য” নারীর জীবনের লক্ষ্য হবে একজন ধার্মীক ছেলে। যে ছেলেটির মধ্যে ঐশী ইলম ও আমলের মিলন ঘটেছে। যার দিলে আছে ইসলামের গভীর জ্ঞান ও আল্লাহ পাকের গভীর ভয়। ব্যস, এমন ছেলে যদি কোন নারীর কপালে জোটে, তাহলে তার দুনিয়ার কুঁড়েঘর আলোকিত হবে সর্গের সুখে। আর এখন নারীর জীবনের লক্ষ্য হচ্ছে, একটা চাকুরী জীবি ছেলে ও অথবা যদি জীবনে একটা আরমী, পুলিশ বিজিবি মিলে। হে নারী! দেখ; তোমার যোগ্যতা যেন তোমার জীবনের কাল না হয়।
ইসলামই একমাত্র ধর্ম যেখানে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার কোন স্থান নেই। ইসলাম ধর্মে রয়েছে কঠোর পর্দার ব্যবস্থা, আর এপর্দাই হচ্ছে, অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা রোধের একমাত্র হাতিয়ার। মহান আল্লাহ পাক এই “ঐশী পবিত্র বিধান” দ্বারা ইসলাম কে করে তুলেছেন অনন্য, আর এর মাধ্যমে তিনি নারীদের দিয়েছেন সীমাহীন মান-মর্যাদা।
১)পর্দার বিধান যেখানেই লঙ্ঘিত, সেখানে অবাধে প্রবেশ করে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা; আর এ হাতীয়ার দ্বারাই শয়তান মানুষকে
কাবু করে ফেলে, করে তুলে চরিত্রহীন। ফলে মানুষ আস্তে আস্তে হয়ে উঠে আল্লাহ পাকের অবাধ্য। তাই আল্লাহ পাক পর্দার মাধ্যমে অশ্লীলতা, বেহায়া ও নগ্নতার দার চিরতরে বন্ধ করে দিয়েছেন।
২)অশ্লীলতা, নগ্নতা ও বেহায়াপনা সাধারণত নারীদের মাধ্যমেই প্রচার-প্রসার ঘটে থাকে, তাই নারীকে আল্লাহ পাক পর্দায় থাকার আদেশ
দিয়েছেন।এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআন মাজীদে সাতটি জলন্ত আয়াত ও হাদীস গ্রন্থে প্রায় আশি খানা সহীহ হাদীস রয়েছে।
৩)মহান আল্লাহ পাক নারীর ইজ্জত ও আবরুর প্রতি এতটাই গুরুত্ব দিয়েছেন যে, তাদের আওয়াজ পর্যন্ত পর্দার অধীনে করে দিয়েছেন,
এমনকি নারীর ছায়া পর্যন্ত দেখার অনুমতি ইসলামে কাউকে দেয়া হয়নি।
৪)ফিকহ ও ফাতাওয়ার কেতাবে উলামায়ে কেরাম বলেন-
কোন হাউজের মধ্যে পানিতেও যদি কোন নারীর ছায়া দেখা যায়,
তাহলে সে ছায়াও দেখা বৈধ হবে না, কারণ এর দ্বারাও পুুরুষ তার দিলের খায়েশ পুরা করতে পারে এবং তার সামনে অশ্লীলতার দার উন্মোচন হয়ে যেতে পারে।
৫)পবিত্র কোরআন মাজীদে বিধান প্রয়োগের ক্ষেত্রে শুধু পুরুষকে লক্ষ্য করেই আদেশ করা হয়েছে, নারীর প্রতি কোন আদেশ
সূচক বাক্য ব্যবহার করা হয়নি। মুফাসসিরীনে কেরামগণ বলের- নারীর নামটাও পর্দার আন্তর্ভূক্ত, তাই বিধান প্রয়োগের ক্ষেত্রে শুধু পুরুষকেই লক্ষ্য করে আদেশ করা হয়েছে, আর এ আদেশের অধীনে নারীরাও রয়েছেন।
৬)সঙ্গত কারণ ছাড়া নারী তার নামও কাউকে বলতে পারবে না, বা এমন কোন জায়গায় লিখতেও পারবে না,
যেখানে পরপুরুষের দৃষ্টি পড়ে। নারীরা তার কাপড়-চোপড় পর্যন্ত এমন জায়গায় শুকাতে দিবে যেখানে কোন পর পুরুষের
নজর না পড়ে।
৭) নারী পর্দা করবে, সে উচ্চ আওয়াজে কথা বলবে না, তার কাপড়-চোপড় পরপুরুষের আড়ালে রাখবে, তার ছায়াও যেন ভিন্ন পুরুষ
না দেখে এবং অযথা তার নাম যেন ভিন্ন পুরুষকে লিখে না দেখায়। এ সমস্ত বিষয়ে নারীকে আদেশ কেন করা হয়েছে? তার কারণ একটাই, তা হচ্ছে অশীøলতা ও বেহায়াপনা দ্বারা যেন শয়তান মানুষকে আক্রমণ করতে না পারে এবং মানব চরিত্র যেন নষ্ট না হয়।
৮)নারীর প্রতি পর্দার এত কঠোর বিধান থাকার পরেও দেখা যায় ভধপবনড়ড়শ ও ড়হষরহব য়ে কিছু মেয়ে ইসলাম প্রচারে ব্যস্ত।
তাদের ছাড়া যেন আর ইসলামের কোন কাজই চলছে না, দ্বীন-ধর্ম যেন সব শেষ হয়ে যাচ্ছে!!! বোরকা পড়া, হেজাব পড়া ছবি তারা নিজেদের আইডিতে ব্যবহার করে। দেখায় আমরা পর্দায় আছি। আসলে তাদের এমন ছবি যে ইসলামে ‘হারাম’ তারা তা বুঝতে সক্ষম হয়নি এবং তাদের যে এমন ইসলাম প্রচারের দরকার নেই তাও তারা জানে না। যদি তোমার ইসলাম প্রচারের এত সখ থাকে তাহলে তোমার ভাই, তোমার মামা, তোমার, চাচার নামে আই, ডি খুলে তুমি ইসলাম প্রচার কর। দেখবে তোমার পিছে কেউ পরবে না। এর পরও যদি নারীর নাম দিয়ে তারা আই, ডি চালায় বুঝতে হবে তাদের ভিন্ন কোন উদ্দেশ্যে আছে। তোমার হায়া (লজ্জা-শরম) চলেগেলে তুমি যা খুশী তাই করতে পারো।
৯)তবে যারা আল্লাহ পাকের একান্ত প্রিয় বান্দী তারা এসমস্ত আদেশ অবশ্যই মেনে চলবে কারণ তাদের কাছে আল্লাহ পাকের সব
আদেশ পালনই সহজ। কোনটাই কঠিন নয়।
সারকথা, নারী সর্বস্থানেই পর্দা রক্ষা করে চলবে। নারীর কোন কিছুই যেন পরপুরুষের নজরে না পড়ে, এমনকি তার বোরকা পড়া ছবি
হলেও সে যেন সেটাকে পরপুরুষ থেকে হেফাজতে রাখে।
১০)কোন নারী যখন খোশবু লাগিয়ে বাহিয়ে যাবে এবং পরপুরুষ তার ঘ্রাণ অনুভব করবে তখন সে যেনা কারিনী বলে গণ্য হবে।
حدثنا محمد بن بشار حدثنا يحيى بن سعيد القطان عن ثابت بن عمارة الحنفي عن غنيم بن قيس عن أبي موسى عن النبي صلى الله عليه وسلم قال كل عين زانية والمرأة إذا استعطرت فمرت بالمجلس فهي كذا وكذا يعني زانية وفي الباب عن أبي هريرة قال أبو عيسى هذا حديث حسن صحيح
শুধু খোশবু ব্যবহার করার কারণে যারা এত বড় গুনার ভাগী হয়, তাহলে ভেবে দেখুন হে আমার দ্বীনী বোনেরা! তোমাদের বোরকা পড়া ছবি যদি পরপুরুষ দেখে তা হলে তোমাদের কি ধরণের গুনাহ হতে পারে!!!!
এজন্যে উলামায়ে কেরাম বলেন- অযথা নারী তার নামও এমন জায়গায় লিখবে না যা ভিন্ন পুরুষের নজরে পরতে পারে।
আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফীক দান করুন।