একটি সার্বিক পর্যালোচনা:
দুইটি শব্দ মিলে “সীরাতুন্নবী” গঠিত। একটি হলো ‘সীরাত’ আর আপরটি হচ্ছে ‘আন্নবী’ । সীরাত শব্দের অর্থ হলো জীবনচরিত বা জীবনেতিহাস। আর ‘আন্নবী’ দ্বারা আমাদের নবীকে বুঝানো হয়েছে, কেননা নবী দ্বারা আরবী ভাষায় সব নবীদের বুঝানো হয়, আর আন্নবী দ্বারা শুধু আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সা. কেই বুঝানো হয়। এখানে ‘সীরাত’ ও ‘আন্নবী’ দুটি শব্দ দ্বারা “সীরাতুন্নবী” গঠিত হয়েছে, যার অর্থ হচ্ছে: মহানবীর জীবনচরিত।
সীরাতুন্নবী দু’ভাগে ভাগ।
আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সা.এর ৬৩বছরের পবিত্র জীবনচরিতকে “সীরাতুন্নবী” বলা হয়। নবী হযরত মুহাম্মদ সা. এর জীবনকে ইতিহাসবেত্তাগণ দু’ভাগে ভাগ করেছেন। প্রথম ভাগ হচ্ছে, নবুওয়াতপূর্ব ৪০বছর, আর দ্বিতীয় ভাগ হচ্ছে, নবুওয়াতপরবর্তী ২৩বছর, সর্বমোট ৬৩বছর। মোট কথা, রসূল সা.এর নবুওয়াতপরবর্তী ২৩বছরের পবিত্র জীবন এবং নবুওয়াতপূর্ববর্তী ৪০বছরের পবিত্র জীবন, রসূলের এ দু’টি জীবন মিলে ৬৩ বছরের পবিত্র জীবনকেই “সীরাতুন্নবী” বলা হয়। রসূল সা.এর মুহাব্বাত ও ভালোবাসা ছাড়া ঈমান কখনও পূর্ণতায় পৌঁছে না। তাই প্রতিটি মুমিন মুসলমানের জন্য জরুরী রসূল সা.এর দু’টি জীবনেরই গুরুত্ব ও তাৎপর্য ভালোভাবে বুঝে ওহীপূর্ব ও পরবর্তী দু’টি জীবনের মাঝে যথাযথ পার্থক্য নির্ণয় করা।
রসূল সা. এর কোন জীবন কোন কাজে লাগে?
ইতিহাসবেত্তাগণ বলেন: আমাদের নবীর নবুওয়াতপূর্ব ৪০বছরের পবিত্র জীবন হচ্ছে, “নবীর জন্য নবুওয়াতের দলীল” আর নবুওয়াত পরবর্তী ২৩বছরের পবিত্র জীবন হচ্ছে উম্মতের জন্য শরীয়তের দলীল।
নবুওয়াতের সূর্য!
মানব জাতির হেদায়েতের জন্য প্রেরিত রসূলগণের মধ্যে সর্বপ্রথম রসূল হচ্ছেন নূহ আলাইহিস সালাম. আর সর্বশেষ রসূল হচ্ছেন হযরত মুহাম্মদ সা.।
হযরত মুহাম্মদ সা. হচ্ছেন রসূলগণের সরদার এবং সর্বশ্রেষ্ঠ রসূল। তাই তাঁর জন্মগ্রহণের পূর্বে পৃথিবীতে এমন সব বিস্ময়কর ঘটনা ঘটতে লাগল যা অতীত কালের কোন রসূলগণের জ¤œলগ্নে ঘটেনি। সূর্যোদয়ের পূর্বে সুবহে সাদিকের দুনিয়া জোড়া আলো এবং রক্তিম পূর্ব দিগন্ত যেমন পৃথিবীবাসীকে সূর্যোদয়ের সুসংবাদ দান করে, তেমনিভাবে নবুওয়াতের সূর্যোদয়ের (হযরত মুহাম্মদ সা.এর জন্ম) মূহুর্তে এমন সব ঘটনা ঘটতে লাগল, যা দেখে পৃথিবীবাসীর বুঝতে বাকি থাকলনা যে, আখেরী যমানার নবীর শুভাগমন ঘটতে যাচ্ছে। তাই ‘মিলাদুন্নবীর’ সময় অর্থাৎ নবীর জন্মের সময় এমন অসংখ্য ঘটনা ঘটেছিলো, যার বিস্তারিত বিবরণ হাদীস ও ইতিহাসের কেতাবসমূহে পাওয়া যায়।
“মিলাদুন্নবী” দুইটি শব্দ দ্বারা গঠিত, একটি হলো ‘মীলাদ’ যার অর্থ হচ্ছে জন্ম, আর অপরটি হচ্ছে ‘আন্নবী’ যা দ্বারা আমাদের নবীকে বুঝানো হয়েছে, “মীলাদুন্নবী” এর অর্থ হচ্ছে “মহানবীর জন্ম”। তাই “মীলাদুন্নবী” বা মহানবীর শুভ জন্মের সময় যে সমস্ত ঘটনা ঘটেছিলো, এসমস্ত বরকতময় ঘটানাবলীতেও উম্মতের জন্য রয়েগেছে অনেক শিক্ষা, তাই মীলাদুন্নবী সংক্রান্ত ঘটনাবলীরও আলোচনা হওয়া চাই।
মিলাদুন্নবী বা নবীর জন্ম সংক্রান্ত কিছু ঘটনা:
আল্লামা ইবনে কাসীর রহ. তার বিখ্যাত ইতিহাসগ্রন্থ আল-বেদায়া ওয়ান-নেহায়াতে এমন অনেক ঘটনা উল্লেখ করেছেন। উল্লিখিত ঘটনাসমূহের মধ্যে একটি ঘটনা হচ্ছে, খারাইতি রহ. বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ বলভী আসমা বিনতে আবু বকর রা.এর সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, যায়দ ইবনে আমর ইবনে নুফাইল এবং ওয়ারাকা ইবনে নাওফল তাঁরা দুজন বাদশাহ নাজাশী-এর দরবারে গিয়েছিলেন। তাঁরা বলেন আমরা তাঁর দরবারে উপস্থিত হওয়ার পর তিনি বললেন, হে কুরাইশদ্বয়! আপনারা সত্যি করে বলুন তো আপনাদের মধ্যে এমন কোন শিশুর জন্ম হয়েছে কি না, যার পিতা তাকে জবাই করতে চেয়েছিলেন? জবাই করার জন্যে নিশ্চয়তা লাভের উদ্দেশ্যে লটারি দেওয়া হলে ওই শিশুটি বেঁচে যায় এবং তার পরিবর্তে প্রচুর উট কুরবানী করা হয়। আমরা বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, শেষ পর্যন্ত ওই লোকটির কি হলো? আমরা বললাম, সে আমিনা বিনতে ওহাব নামের এক মহিলাকে বিয়ে করেছেন এবং তাকে অন্তঃসত্ত¡া রেখে সফরে বেরিয়েছে। তিনি বললেন, ওর কোন ছেলেমেয়ে জন্মেছে কি? ওয়ারাকা বিন নওফল বললেন, জাঁহাপনা! সে সম্পর্কে আমি আপনাকে বলছি শুনুন। একরাতে আমি আমাদের এক মূর্তির পাশে রাত কাটাই। আমরা ওই মূহুর্তে তাওয়াফ ও উপাসনা করতাম। হঠাৎ আমি তার উদর থেকে শুনতে পাই সে বলছে:
ولد النبی فزلت الاملاک ٭ ونای الضلال وادبر الاشراک
অর্থ:নবী জন্মগ্রহণ করেছেন, রাজা-বাদশাহগণ লাঞ্জিত হয়েছে। গোমরাহী বিদূরিত হয়েছে এবং শিরক পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পালিয়েছে। এতটুকু বলেই মূর্তিটি মুখ থুবড়ে পড়ে যায়।
এবার যায়েদ ইবনে আমার ইবনে নুয়াফল বললেন, জাঁহাপনা! এ বিষয়ে আমারও কিছুটা জানা আছে। নাজাশী বললেন, বলুল! যায়দ এবনে আমর বলতে লাগলেন, উনি যে রাতের ঘটনা বলেছেন ওই রাতেই আমি আমার বাড়ি থেকে বের হয়েছিলাম। আমার পরিবারের লোকেরা তখন আমিনার গর্ভের সন্তান সম্পর্কে আলোচনা করছিল। আমি আবু কুবায়স পাহাড়ে এসে উঠি। উদ্দেশ্য ছিল যে বিষয়টি নিয়ে আমি সন্দিহান ছিলাম সে বিষয়ে নির্জনে চিন্তা-ভাবনা করব। হঠাৎ আমি দেখতে পেলাম, একজন লোক আকাশ থেকে কুবায়েস পাহাড়ে অবতরণ করল, তার দুটো সবুজ পাখা। সে মক্কা নগরীর দিকে তাকিয়ে বললো, শয়তান লাঞ্জিত হয়েছে, মূর্তি-প্রতিমা বাতিল ও অকার্যকর হয়েছে। এবং বিশ্বভাজন আল-আমিন জন্মগ্রহণ করেছেন। এরপর তার সাথে থাকা একটি কাপড় সে পূর্ব দিগন্তে ও পশ্চিম দিগন্তে ছড়িয়ে দিল। আমি দেখলাম ওই কাপড়ে আকাশের নিচের সব কিছু ঢেকে গিয়েছে এবং এমন একটি জ্যোতি বিচ্ছুরিত হয়েছে যে, আমার দৃষ্টিশক্তি যেন ছিনিয়ে নেবে। এ দৃশ্য দেখে আমি ভয় পেয়ে যাই। এই আগন্তুক ডানা মেলে উড়ে গিয়ে কা‘বা গৃহের উপর নামে আর তার দেহ থেকে এমন আলো ছড়িয়ে পড়ে যে, সমগ্র তেহামা অঞ্চল আলোকিত হয়ে যায়। সে বলল, এবার ভুমি পবিত্র হলো এবং তার বসন্তকাল শুরু হলো। কা‘বা গৃহে অবিস্থত মূর্তিগুলোর প্রতি সে ইঙ্গিত করল আর সাথে সাথে সবগুলো মূর্তি মুখ থুবড়ে পড়ে গেল।
নাজাশী বললেন হায়! আপনারা এবার এ বিষয়ে আমি যে পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি তা শুনুন। আপনারা যে রাতের কথা বলেছেন সে রাতে আমি আমার নির্জন প্রেকোষ্ঠে ঘুমিয়েছিলাম। হঠাৎ দেখি মাটি ফাঁক করে একটি ঘাড় ও মাথা বেরিয়ে এলো । সে বলছিল, হস্তী বাহিনির ওপর ধ্বংস কার্যকর হয়েছে। ঝাঁকে ঝাঁকে আবাবীল ওদের প্রতি পাথরের কংকর নিক্ষেপ করেছে। হারাম শরীফের ইজ্জত বিনষ্টকারী ও দম্ভ প্রদর্শনকারী আশরাম নিহত হয়েছে। মক্কা ও হারাম শরীফের অধিবাসী উম্মী নবী জন্মগ্রহণ করেছেন। তাঁর আহŸানে যে সাড়া দেবে সে ভাগ্যবান হবে, আর যে, প্রত্যাখ্যান করবে সে ধ্বংস হবে। এতটুকু বলে ওই মাথাটি জমীনের নিচে অদৃশ্য হয়ে যায়। এদৃশ্য দেখে আমি ভয়ে চিৎকার করছিলাম কিন্তু দাঁড়াতে পারিনি। এবার আমি স্বহস্তে আমার নির্জনে প্রকোষ্ঠের পর্দাগুলো ছিঁড়ে ফেলি। আমার পরিবারের লোকেরা তা শুনতে পায় এবং আমার নিকট আসে। আমার দৃষ্টিসীমা থেকে হাবশী লোকদের সরিয়ে দেয়ার জন্যে আমি নির্দেশ দেই। তারা ওদেরকে সরিয়ে দেয়। এরপর আমার মুখ ও পা জড়তা মুক্ত হয়।
সুহাইলী রহ. বর্ণনা করেন যে, ইবলীস জীবনে চারবার বিলাপ করে: ১। অভিশপ্ত হওয়ার সময়।
২। জান্নাত থেকে বিতাড়িত হওয়ার সময়।
৩। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জ¤েœর সময়।
৪। সূরা ফাতিহা নাযিল হওয়ার সময়।
হাফিজ আবু বকর মুহাম্মদ বিন জাফর ইবনে সাহল আল-খারায়েতী রহ. তার কিতাবে উল্লেখ করেছেন যে, হানী আল-মাখযূমী যিনি দেড়শ’ বছর আয়ূ পেয়েছিলেন- তিনি বলেন, রসূল সা. যে রাতে জন্ম গ্রহণ করেন সে রাতে কিসরার রাজপ্রাসাদ প্রকম্পিত হয়ে ওঠে , তার চৌদ্দটি গম্বুজ ভেঙ্গে যায় , পারস্যের অগ্নিকুÐ নিভে যায়। অথচ এর আগে এক হাজার বছরের মধ্যে কখনো তা নির্বাপিত হয়নি। সাওআ হ্রদ শুকিয়ে যায় এবং সিরীয় ধর্মযাজক মুবিযান ম্বপ্নে দেখেন যে, কতগুলো উট ঘোড়াকে হাঁকিয়ে নিযে যাচ্ছে। তাড়া খেযে ঘোড়াগুলো দজলা নদী (টাইগ্রীস) অতিক্রম করে তাদের জনপদসমূহে ছড়িয়ে পড়েছে।
মীলাদুন্নবী উম্মত কিভাবে পালন করবে?
মীলাদুন্নবী সম্পর্কীয় এমন আরো অনেক ঘটনা হাদীস ও ইতিহাসের কেতাবসমূহে পাওয়া যায়। এ গুলো শুধু আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ এখানে করণীয় বলতে উম্মতের কিছু নেই। তাই আমাদের স্মরণ রাখা দরকার যে, মীলাদুন্নবী (নবীর জন্ম) সীরাাতুন্নবী অর্থাৎ তাঁর ৬৩ বছরের পবিত্র জীবনের একটি অংশ মাত্র, যেখানে তাঁর পবিত্র জন্ম সংক্রান্ত অসংখ্য ঘটনা বিদ্যমান রয়েছে, যা শুধু আলোচনাই করা যায়। এখানে উম্মতের করণীয় বলতে কিছু নেই। মীলাদুন্নবীতে যদি উম্মতের আবশ্যকীয় করণীয় কোন বিষয় থাকতো তাহলে রসূল সা. নবুওয়াত পরবর্তী ২৩বছরের পবিত্র জীবনে নিজে করতেন এবং সাহাবায়ে কেরামদের শিক্ষা দিতেন যে, এভাবে মীলাদুন্নবী পালন করতে হয়। তাই যারা “মীলাদুন্নবী” অর্থাৎ “নবীর জন্ম” নিয়ে রসূল প্রেমের আবরণ দিয়ে সেটাকে “ঈদে মীলাদুন্নবী” নাম দিয়ে ইসলাম ধর্মের অন্যতম করণীয় কাজের রূপ দিতে চায়, নিশ্চয় তাদের এ কাজ উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং এর মাধ্যমে তারা ঘোলা পনিতে মাছ শিকার করতে চায়। বলি, ঈদে মীলাদুন্নবী যদি পুণ্যের কাজই হয়? তাহলে রসূল ও সাহাবায়ে কেরাম এটাকে এড়িয়ে গেলেন কেন? নাকি তাদের এটা বুঝে আসেনি যে এটা একটা পুণ্যের কাজ!
তাই যারা রেসালতের ২৩বছরকে উপেক্ষা করে ঈদে মীলাদুন্নবীকে নিয়ে নাচা-নাচি করছে তাদের শেষ পরিণাম কখনও ভালো হবে না। রেসালতকে উপেক্ষা করে যারা মনগড়া পথ অবলম্বন করছে তাদের ভয়াবহ পরিণতির সম্মুখিন হতে হবে।
রাসূল সা.এর কোন জীবন কাফেররা মেনে নিতে পারেনি?
রসূল সা. এর চল্লিশটি বছর আরবদের মাঝে কেটে যায়, এ সময় তাদের মাঝে রসূল সা.এর পরিচয় ছিলো মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ, আর যখন তাঁর কাছে ওহী আসা শুরু হলো তখন তাঁর নাম হলো মুহাম্মদুর রসূলুল্লাহ সা.। ওহীপূর্ব ৪০বছরের পবিত্র জীবনে মক্কার কাফেরদের সাথে নবী হযরত মুহাম্মদ সা.এর শত্রæতা বা দুশমনীর কোন বর্ণনা ইতিহাসবেত্তাগণ উল্লেখ করেননি। কিন্তু যখন তিনি ঘোষণা করলেন যে, আমাকে আআল্লাহ রসূল হিসেবে প্রেরণ করেছেন, হে লোক সকল! তোমরা বল: “আল্লাহ এক; অদ্বিতীয় তাঁর কোন শরীক নাই” তখন আরবের লোকেরা তাদের মাজা এঁটে-সেঁটে বেঁধে নিল। তখন তারা হযরত মুহাম্মদ সা.এর সব কথা মেনে নিতে পারলেও তাওহীদের এই বাণী কখনও মেনে নিতে পারেনি। মক্কার কাফেরদের শীর্ষস্থানীয় যারা নেতা ছিলো যেমন: আবু-লাহাব, আবু-জাহল, উৎবা, শাইবা, রবীয়া, ওলীদ এবনে মুগীরা এরা দফায় দফায় আবু তালিবের সাথে মিটিং করেছে যেন মুহাম্মদ তার এই কথা থেকে ফিরে আসে । এ মর্মে রেসালতের শুরুর দিককার কিছু কথা মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর ভাষায় স্মরণীয় করে রেখেছেন। ইরশাদ হচ্ছে: সে কি বহু মাবুদের পরিবর্তে একজন মাবুদই স্থির করে নিয়েছে? নিশ্চয় এটা এক বিস্ময়ক ব্যাপার। তাদের কয়েকজন প্রধান এ কথা বলে সরে পড়ে যে, তোমরা চলে যাও এবং তোমাদের দেবতাদের পূঁজায় অটল থাক, নিশ্চয় ব্যাপারটি উদ্দেশ্যমূলক।
(সূরা ছোয়াদ; ৫-৬)
আশা করি কারো বুঝতে বাকি নেই যে, নবী হযরত মুহাম্মদ সা.এর সাথে কাফের নেতাদের ঝগড়া ও দুশমনীর মূল কারণ কি ছিলো? এ ঝগড়া ও দুশমনীর মূল কারণই হচ্ছে রেসালত। হযরত মুহাম্মদ সা. এর ওহীপূর্ব পবিত্র ৪০বছরের জীবনে রেসালত না থাকার কারণে তাঁর কোন দুশমনও ছিলনা এ জন্য রসূলকে তাঁর প্রিয় মাতৃভুমি ত্যাগও করতে হয়নি। কিন্তু রেসালতের দায়িত্ব পাওয়ার পর বাঁধ ভাঙ্গা বন্যার ন্যায় তার সাথে কাফেরদের দুশমনী বাড়তে থাকে।
সার কথা, মূলত কাফেরদের শত্রæতা হল রসূলের ২৩বছরে ওহীপরবর্তী জীবনের সাথে। ওহীপুর্ব ৪০বছরের জীবনের সাথে তাদের কোন শ্রত্রæতা নেই। কারণ রসূলের এ ৪০বছরের জীবনে না কোন দাওয়াত ছিলো না কোন আমল ছিলো। আর আমাদের স্মরণ রাখতে হবে যে, “ঈদে মীলাদুন্নবী” রেসালত পূর্ববর্তী একটি বিষয়। উম্মতের জন্য এটা করণীয় কোন বিষয় হলে রসূল নিজেই এর প্রতি সমর্থন দিতেন। তাই রেসালতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কোন প্রকার সমর্থন না থাকা সত্তে¡ও যারা ঈদে মীলাদুন্নবী নিয়ে ব্যস্ত, প্রকৃত পক্ষে তারা রেসালতকে উপেক্ষা করে প্রবৃত্তির অনুসরণ করছে। আর যারা প্রবৃত্তির অনুসরণ করে তারা কখনও হেদায়েতের পথ খুঁজে পায় না।
প্রিয় পাঠক! রসূলের ওহীপূর্ব ও ওহীপরবর্তী দুই জীবনের মধ্যে কতটুকু তফাৎ আশা করি বুঝতে পেরেছেন। বিষয়টা আরো পরিস্কার করার নিমিত্তে ও সম্যক অবগতির জন্য আরো কিছু পার্থক্য তুলে ধরা হলো।
রেসালতের ৬৩ বছরের পবিত্র জীবন দুই ভাগে ভাগ।
(ক) ওহীপুর্ব ৪০বছর।
১। এ জীবনে রসূল সা.মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ নামে পরিচিত ছিলেন।
২। নবুওয়াতপূর্ব পবিত্র চল্লিশ বছরের জীবন নবীর জন্য “নবুওয়াতের দলীল” তাই “মীলাদুন্নবী” অর্থাৎ নবীর জন্ম থেকে নিয়ে শিশুকালে, কৈশরে, নবযৌবনে, যৌবনে ও প্রৌঢ়কালে যে সমস্ত ঘটনা ঘটে তা প্রমাণ করে যে, তিনি ভবিষ্যতে নবী হবেন।
৩। “মীলাদুন্নবী” অর্থাৎ নবীর জন্য তাঁর ৬৩ বছরের পবিত্র জীবনের একটি অংশ মাত্র তাই “মীলাদুন্নবী” কেন্দ্রীক যত ঘটনা ঘটেছে তা আলোচনার বিষয় এখানে উম্মতের আমলগত কোন দিক নেই।
৪। রসূল সা. এর এ জীবনে রেসালতের দাওয়াত ছিলোনা।
৫। যার কারণে মক্কার কাফেরগণ রসূলের সাতে কোন প্রকার শত্রæতা ও দুশমনীও করতো না।
৬। রসূলেন এ জীবনে একটি বারের জন্যও তারা দাদা আব্দুল মুত্তালিব এবং তার তিরোধানের পর চাচা আবু তালিবের কাছে কাফেররা কোন প্রকার বিচারও নিয়ে যায় নি।
(খ) ওহীপরবর্তী ২৩ বছর।
১। মুহাম্মদুর রসূল সা. নামে পরিচিতি লাভ করেন।
২। রসূল সা. রেসালতের দ্বারা ধন্য হন।
৩। কুরআনের তেলাওয়াত ও কুরআনের শিক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয় ।
৪। মক্কার কাফেরগণ রসূলের ঘোড় শত্রæ হয়ে যায়।
৫। হত্যার ষড়যন্ত্র করে।
৬। হিজরতে ঘটনা ঘটে।
রসূল সা.এর কোন জীবন উম্মতের জন্য আদর্শ?
রসূল সা. এর রেসালতের এই ২৩বছরের পবিত্র জীবনকে মডেল বা আদর্শ না বানালে মু‘মিন হওয়া যায়না। মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন; যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহ কে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য রসূলের পুতঃপবিত্র জীবনে উত্তম নমুনা রয়েছে। (সূরা আহযাব; ২২)
রসূল সা.এর ৬৩বছরের পবিত্র জীবনের এই ২৩টি বছর উম্মতের জন্য আদর্শ। এই ৬৩বছরের ২৩বছর হচ্ছে উম্মতের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এ জীবনের অনুসরণ ছাড়া জান্নাতে যাওয়া কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। সাহাবায়ে কেরাম রসূল এর এই ২৩বছরকে অনুসরণ করেছেন এবং রসূল সা.ও সাহাবায়ে কেরামদের রেসালতের এই ২৩বছরকে অনুসরণ করতে বলেছেন। তাই উম্মতের জন্য অতীব জরুরী হলো “সীরাতুন্নবীর” রেসালত অংশকে অনূসরণ করা যেমনটি নির্দেশ দিয়েছেন মহান আল্লাহ তায়ালা।
হে আল্লাহ! আমাদের হক্ব বোঝার তাওফীক নসীব করেন। আমীন।