মঙ্গলবার ৪ঠা সফর, ১৪৪৭ হিজরি ২৯শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নারী যখন ফেছবুকে

 

আমার সামনের লেখাটা বোঝার জন্যে কিছু ভিন্ন বিষয় আমাদের বুঝতে হবে। আসুন, সেই বিষয় নিয়ে একটু আলোচনা করি।

১ নম্বর বিষয়টা হচ্ছে “ ইন্টারনেট”

ইন্টারনেটকে

Virtual World (ভার্চিউয়্যাল ওয়ার্ল্ড) বলা হয়। যার অর্থ: “ফলত: বটে, কিন্তু বাহ্যত: নয়, এমন।” আরো সহজ ভাবে যদি অর্থ করেন, তাহলে অর্থটা দ্বারাবে- যে জগতটা প্রকৃত পক্ষে আছে; কিন্তু দৃশ্যমান নয়। দৃশ্যমান নয় এর অর্থ হচ্ছে, যে জগতটাকে বাহ্যেন্দ্রিয় বা পঞ্চ ইন্দ্রিয়

(১.চক্ষু  ২.কর্ণ  ৩.নাসিক  ৪.জিহ্বা  ৫.তক ) দ্বারা মানুষ সাভাবিক ভাবে বুঝতে বা দেখতে সক্ষম নয় বরং কোন কিছুর মাধ্যমে পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে দেখতে বা বুঝতে সক্ষম হয়। এখানে আমাদের আর একটি কথা স্মরণ রাখা দরকার যে, গায়েব বা অদৃশ্য বলা হয় ঐসমস্ত বস্তুকে যা পঞ্চ ইন্দ্রিয় বা কোন প্রকার মাধ্যম দিয়ে মানুষ দেখতে সক্ষম নয়, যেমন: জান্নাত, জাহান্নাম, ফিরিস্তা ইত্যাদি।

কিন্তু “ভার্চিউয়্যাল ওয়ার্ল্ড” গায়েব বা অদৃশ্যমান কিছু নয়। কারণ এজগতটাকে আমরা মোবাইল, ল্যাপটপ ও কম্পিউটারের সাহায্যে বাহ্যেন্দ্রিয় বা পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে দেখতে পাই। সার কথা, ভার্চিউয়্যাল জগত, আর আমাদের এপৃথিবী দুটি ভিন্ন কোন জিনিস নয় বরং একই জিনিস, একই জগত তফাৎ হচ্ছে এ জগতটাকে আমরা সরাসরি বাহ্যেন্দ্রিয় বা পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে দেখতে পাই আর ঐ জগতটাকে একটা মাধ্যমে দিয়ে দেখতে পাই।

২য় নম্বর বিষয় হচ্ছে, এ মহা বিশ্বের নব¯স্রষ্ঠা হচ্ছে মহা আল্লাহ পাক। আর স্রষ্টাই জানেন সৃষ্টিজগতের কোন বস্তুকে কোথায় রাখতে হবে। চাঁদকে যে ভাবে স্থাপন করলে সৃষ্টিজগতের কল্যাণ হবে ঠিক সেভাইে চাঁদকে স্থাপন করা হয়েছে। সুর্যকে কোথায় স্থাপন করলে পৃথিবীবাসীর মঙ্গল হবে মহান স্রষ্টা সুর্যকে সেখানেই স্থাপন করেছেন। বিজ্ঞানীরা বলেন সুর্যটা যদি এক ইঞ্চি নিচে নেমে যায় তাহলে যমীনটা পুরে ছাই হয়ে যাবে। আর যদি এক ইঞ্চি উপরে উঠে যায় তাহলে পৃথিবীটা হিম হয়ে যাবে। দুইটি উদাহরণ পেশ করলাম শুধু একটি বিষয় বোঝানোর জন্যে তা হচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক আমাদের রব আমাদের স্রষ্টা  রব হিসেবে তিনি প্রতিটি বস্তুর স্বভাব ও গুণ সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞাত। সবার স্বভাব ও গুণের প্রতি লক্ষ্য রেখেই তিনি স্ব স্ব স্থানে সবাইকে স্থান দিয়েছেন। যাতে পৃথিবীবাসী কোন প্রকার সমস্যার সম্মুখীন না হয়। বিধায় মাছের উপযোগী জায়গাতেই মাছ স্থান দেয়া হয়েছে। পাখীর উপযোগ

স্থানেই পাখীকে থাকার আদেশ দেয়া হয়েছে।প্রতিটি প্রাণীর উপযোগী স্থানেই তাদের জায়গা করে দেয়া করে দেয়া হয়েছে। আর আশরাফুল মাখলুকাত মানুষের এক ভাগ নর আর এক ভাগ নারী। নর ও নারীর সার্বিক কল্যাণের প্রতি দৃষ্টি দিয়েই আল্লাহ পাক নারীকে আদেশ দিএচেন।

وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ

( হে নারী জাতি) তোমরা তোমাদের গৃহেই অবস্থান কর। আল- আহযাব; ৩৩। নারী জাতির যাবতীয় কল্যাণ নিহিত হয়েছে তাদের গৃহে অবস্থানের মাধ্যমেই। এক হাদীসে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

أقرب ما تكون من وجه ربها وهي في قعر بيتها

নারী আল্লাহ পাকের চেহারার সামনে থাকে ততক্ষণ যতক্ষণ সে তার ঘরের কোনে অবস্থান করে। নারী ঘরে অবস্থান করবে, এটাই নারীর প্রথম স্তরের পর্দ। ইসলামে পর্দা দ্বারা এ পর্দাকেই বুঝানো হয়েছে। তবে সঙ্গত কারণে যদি বাহিরে নারীকে যেতেই হয়, তাহলে সে কি ভাবে বাহিরে যাবে, এ দিকনির্দেশনাও কোরআন সুন্দর ভাবে দিয়েছে।

وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى

এবং তোমরা তোমাদের গৃহেই অবস্থান করবে, প্রথম জাহেলিয়াযুগের নারীদের ন্যায় নিজেদেরকে প্রদর্শন করো না। আল- আহযাব ৩৩;

পূর্বের আয়াতে আল্লাহ পাক নারীদের ঘরে অবস্থান করতে বলেছেন, তবে বাহিরে যেতে নিষেধ করেন নাই। বাহিরে কি ভাবে যাবে তা আল্লাহ পাক উল্লিখিত আয়াতে বর্ণনা করেছেন যে, তোমরা বাহিরে যাওয়ার সময় বর্বর ও জাহেলী যুগের অসভ্য নারীদের ন্যায় বাহিরে যাবে না। অসভ্য নারীর লক্ষণ দুইটি:

১। যারা পর পুরুষের সাথে মধুর সূরে কথা বলে।

২। যারা কাপড় পড়ে অথচ উলঙ্গ থাকবে। এরা পুরুষকে নিজেরদের দিকে আকৃষ্ট করে, শেষ পর্যন্ত এরা নিজেরাও পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে।

আসভ্য নারীদের শেষফল তারা  আস্তে আস্তে ব্যাভিচারে লেগে যায়। আমরা তাহলে এবার বুঝতে পারলাম যে, নারীদের বাহিরে যাওয়া নিষেধ না, যেতে পারবে কিন্তু অসভ্য নারীদের ন্যায় যেতে পারবে না। নারীরা ঘরের বাহিরে যেতে চাইলে সঙ্গত কারণ থাকতে হবে এবং এটাও খেয়াল রাখতে হবে যে, তার সাথে বাহিরে যাওয়ার জন্যে কোন মাহরাম পুরুষ তার নেই( ‘মাহরাম পুরুষ’ যাদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া চিরতরে হারাম) তখন সে বাহিরে যেতে পারবে। তাফসিরের কেতাবে এমন তিনটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে, যে তিনটি কারণে নারী ঘরের বাহিরে যেতে পারে।

১। ব্যক্তিগত দরকারে। যেমন, অসুস্থ হলে ডাক্তারের কাছে যাওয়া। মা- বাবাকে দেখতে যাওয়া। ইত্যাদি।

২। ধর্মীয় কারণে। যেমন,হজ্ব করার জন্যে। ইসলামী জীবন-যাপন করার উপযোগী শিক্ষা-দীক্ষা গ্রহণ করার জন্যে।

৩। আর্থিক সংকটে। তবে একটি কথা আমাদের স্মরণ রাখতে হবে যে, সুস্থ একজন যুবতী নারীর যদি কোন কামাই-কাজির পথ না থাকে, তাহলে সরকারই চিরদিন তার খরচ বহন করবে।

উল্লিখিত কারণে নারী ঘরের বাহিরে যেতে পারবে ঠিক তবে নি¤েœ বর্ণিত শর্তগুলি তাকে অবশ্যই মেনে চলতে হবে।

১। এমন চাদর মাথার উপর দিবে যা পা পর্যন্ত ঢেকে নিবে। ( আধুনিক বরকা শরয়ী বরকা অধীনে পরে না, তাই বরকার ক্ষেত্রে আমাদের খুব সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার।) ২।সুগন্ধি ব্যাবহার করতে পারবে না।৩। আওয়াজ হয় মত অলংকার পরিধান করতে পারবে না।৪। রাস্তার একপাস দিয়ে যাবে। ৫। ভিড়ের মধ্যে প্রবেশ করবে না।৬। বাহিরে গেলে আস্তে আস্তে কথা বলবে যেন কোন পরপুরুষ তার কথা শুনতে না পারে।

এবার আসল কথার দিকে আসা যাক। ইসলাম নারীকে যে পর্দার আদেশ দিয়েছে, সে পর্দা পালনের মাধ্যমে নারী সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও মর্যাদার অধিকারী হতে পারে। ইসলাম নারী জাতিকে যে পর্দার আদেশ দিয়েছে সে পর্দার নাম হচ্ছে “ নারী তার গৃহেই  অবস্থান করবে” নারী জাতির এক নম্বর পর্দা হচ্ছে হে নারী! তুমি তোমার গৃহেই অবস্থান কর।  সঙ্গত কারণ ছাড়া কখনও তুমি তোমার ঘরের বাহিরে যাবে না। তবে হাঁ, নারীকে যদি সঙ্গত কারণে তার গৃহের বাহিরে যেতেই হয়, তাহলে তাকে বাহিরে যাওয়ার জন্যে ইসলাম যে সমস্ত শর্ত আরোপিত করেছে সে  সমস্ত শর্ত মেনেই তাকে বাহিরে যেতে হবে। গৃহের বাহিরে যাওয়ার সময় ইসলাম নারীকে কি ভাবে যাওয়ার আদেশ দিয়েছে এর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা আমি উপরে দিয়েছি।

এবার আসা যাক (virtual world) ভার্চিউয়্যাল ওয়ার্ল্ডে বা জগতে প্রবেশের ক্ষেত্রে ইসলাম নারীকে কি বলে? পার্থিব জগতে ইসলাম যেমন নারীকে তার গৃহেই অবস্থান করতে বলে, তেমনি ভার্চিউয়্যাল ওয়ার্ল্ডে বা জগতেও ইসলামস নারীকে তার গৃহেই অবস্থান করতে বলে।

তবে এখানে অর্থাৎ  ভার্চিউয়্যাল জগতেও নারী তার গৃহেই  অবস্থান করবে এর তাৎপর্য হচ্ছে, নারী এমন কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারবে না, যার দ্বারা সে ভার্চিউয়্যাল জগতে জগতে প্রবেশ করতে পারে, যেমন মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার ইত্যাদি। নারী যখন মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার ইত্যাদি ব্যাবহার থেকে বিরত থাকবে তখন মনে করতে পারেন। নারী তার গৃহেই অবস্থান করছে। আর যখনই এগুলো ব্যাবাহর করবে, তখনই মনে করতে হবে নারী এখন আর তার গৃহে নেই সে এখন তার গৃহের বাহিরে আবস্থান করছে। আর নারী গৃহের বাহিরে গেলেই নারী অসভ্য ও বেহায়া হয়ে যায়। আর নারী যখন তার অমুল্য সম্পদ লজ্জা-শরম হারিয়ে ফেলে। আর লজ্জা-শরমহীন একজন নারী একাই শত শত পুরুষকে জাহান্নে নেয়ার জন্যে যথেষ্ট। তবে হাঁ; সঙ্গত কারণ যদি থাকে তা হলে নারী ভার্চিউয়্যাল জগতেও সে  প্রবেশ করতে পারবে, যেমন মঙ্গগত কারণে সে পার্থিব জগতে গৃহের বাহিরে যেতে পারে। ভার্চিউয়্যাল জগতে প্রবেশের সঙ্গগত কারণ সমূহের মধ্যে একটি কারণ স্বামীর সাথে কথা বলা। যেমন নারীর   স্বামী থাকে বিদেশে এবার স্বামীর সাথে তাকে যোগাযোগ বা কথা বলতে হবে, এবার সে ভার্চিউয়্যাল জগতে প্রবেশ করতে পারবে। অথবা নারীকে তার মা-বাবার সাথে কথা বলতে হবে ইত্যাদি। তবে সবার স্মরণ রাখা দরকার যে, নারী শুধুমাত্র তার পরিচিত মাহরাম পুরুষদের সেভ নাম্বারগুলোই রিসিভ কতরে পারবে এ ছাড়া অন্য কোন ফোন নাম্বার থেকে কল আসলে কখনও সে ফোন রিসিভ করবে না। আর ফেসবুক ইত্যাদি যদি সঙ্গত কারণে ব্যাবহার করতেই হয়। তাহলে নিজের ভায়ের, অথবা স্বামীর নাম দিয়ে ব্যাবহার করবে। নারী জাতি নারী সূলভ নাম দিয়ে কখনও ফেসবুক ব্যাবহার করতে পারবে না। তাফসীরবেত্তাদের মতে নারীর নামও পর্দার অন্তর্ভুক্ত। তাই মুসলিম রমণীরা এ বিষয়ের প্রতিও গুরত্ব দিবে আশা করি।