সোমবার ১০ই সফর, ১৪৪৭ হিজরি ৪ঠা আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ধর্ষণে থেকে উত্তরণের পথ কি খোলা!?

مرض بڑھتا گیا، جوں جوں دوا کی
কবি যথার্ত বলেছেন; ‘ঔষধের ছড়াছড়ি রোগ বেড়েছে কাঁড়ি কাঁড়ি’। অপরাধ দমনে অধুনিক ব্যবস্থপনার কোন শেষ নেই। আবার নতুন নতুন বাহিনীও গঠন হচ্ছে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে। তার পরও অপরাধীর মনে ভয়ের লেশ মাত্র নেই। যেন; চোর না শুনে ধর্মের কাহিনী এর বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে।
আজকে ধর্ষণের কাছে উন্নত বিশ্বের সব শাসন হার মেনেছে! ধর্ষন শুধু আমাদের দেশে নয় ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আমরা এর বিকৃত চিত্র দেখেছি ও খবরে পড়েছি। কিন্তু কেন? ধর্ষন বন্ধ হচ্ছে না কেন? এর আগেও তো ধর্ষণের বিচার হয়েছে তারপর ধর্ষক সাহস পায় কিভাবে এই ভয়াবহ আপরাধে কাছে যেতে!
আসল কথা হলো ডাক্তার যদি রোগ নির্ণয়ে ব্যর্থ হয় তাহলে চিকিৎসা দিবে কেমনে!? সারা বিশ্বে ও আমাদের দেশে ধর্ষণ দমনে যে আইন আছে এটা ধর্ষণ বন্ধের কার্যকারী আইন নয়। যার কারণে ধর্ষকের মনে এই আইন ভয়ের সঞ্চালন করতে পারেনি। মানব মস্তিষ্কের চিন্তার দ্বারা আবিস্কৃত আইনে ধর্ষকের পাশবিক শক্তিকে আঘাত হানার মতো কোন শক্তি নেই। তার পাশবিক শক্তিকে ভেঙ্গে চুরমাচুর করে দিবে এমন আশাটাও করা বোকামি ছাড়া কিছু নয়। তাই এই আইন দিয়ে ধর্ষণ ঠেকানো কষ্মিণকালেও সম্ভব নয়।
যা আমাদের মনে রাখা দরকার:
অপরাধ দমনের আগে অপরাধের শাস্তি নির্ধারণ করা জরুরী। একজন অপরাধী অপরাধের শাস্তির চিন্তা করে অপরাধ থেকে দুরে সরে যায়। এ জন্যে ইসলাম শাস্তি নির্ধারণ ও প্রয়োগকে খুব গুরুত্ব দিয়ে থাকে। ইসলাম অপরাধ দমনে এমন আইন প্রণয়ন করে থাকে যা অপরাধীর পাশবিক শক্তিকে আঘাত হেনে ভেঙ্গে চুরমাচুর করে দেয় এবং মনে ভয়ের উদ্রেক ঘটায়।
আপরাধ দমনে ইসলামী আইন:
আপরাধের সাজা ও শাস্তিকেই আমরা ‘দÐবিধি’ বলি। মৃত্যদÐ থেকে শুরু করে জেল-জরিমানা যত প্রকার সাজা আছে আমরা ঢালাও ভাবে সবগুলোকেই ‘দÐবিধি’ বলে থাকি। আসলে আপরাধ সম্পর্কিত সব শাস্তিকেই ‘দÐবিধি’ বলে অভিহিত করা একেবারেই ভুল।
একজন মুসলমানের এব্যাপারে কতটুকু করণীয় আসুন একটু জেনে নেই। ইসলামী শরীয়তে অপরাধের শাস্তিকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
(ক) হুদুদ (খ) কেসাস (গ) তা’যীরাত অর্থাৎ, ‘দÐবিধি’ শুধু ‘গ’ নাম্বার কেই দÐবিধি বলার সুযোগ আছে।‘ক’ ও ‘খ’ কখনও দÐবিধি বলা যায় না।
বিধি-বিধানের ভিন্নতার কারণ কি?
সব রকম অপরাধের সাথেই ‘হক্কুল্লাহ’( আল্লাহর হক) এবং হক্কুল আবদ্ ( বান্দার হক) উভয়টিই বিদ্যমান থাকে। কিন্তু কোন কোন অপারাধে আল্লাহর হক প্রবল থাকে আবার কোন কোন অপরাধে বান্দার হক প্রবল থাকে এবং এ প্রাবল্যের উপর ভিত্তি করেই বিধি-বিধান রচিত হয়েছে।
১. যে সমস্ত আপরাধে আল্লাহর হকের পরিমাণ প্রবল ধরা হয়েছে, সেগুলোর শাস্তিকে শরীয়তের পরিভাষায় এক বচনে ‘হদ’ আর বহুবচনে ‘হুদুদ’ বলা হয়।
‘হদ’ এর ক্ষেত্রে মুসলিমদের আক্বিদা:
‘হদ’ এর ব্যপারে বান্দার কোন হাত নেই আল্লাহ রব্বুল আলামিন যেমন বলেছেন তেমনই করতে হবে। লঘু অথবা কঠোর করার অধিকার কারো নেই। এমন চিন্তা কেউ করলে সে কাফের বলে বিবেচিত হবে।
হুদুদ মাত্র পাঁচটি।
(১) ডাকাতির শাস্তি।
(২) চুরির শাস্তি।
(৩) ব্যভিচার বা যিনার শাস্তি।
(৪) ব্যভিচারের আপবাদের শাস্তি।
(৫) মদ্যপানের শাস্তি।।
*ডাকাতির শাস্তির একটু ব্যাখ্যা দরকার:
(ক) ডাকাত দল; মালও লুন্ঠন করেছে, হত্যাও করেছে, তাহলে তাদের ফাঁসি দেওয়া হবে।
(খ) শুধু হত্যা করেছে মাল লুন্ঠন করেনি, তাহলে তাদের হত্যা করা হবে।
(ঘ) হত্যা করেনি শুধু মাল লুন্ঠন করেছে, তাহলে তাদের বিপরীত দিক থেকে হস্তপদসমূহ কেটে দেওয়া হবে।
(ঙ) হত্যাও করেনি মালও লুন্ঠন করেনি বরং মানুষদের শুধু ভয়-ভিতি দেখায়, তাদের নির্বাসন বা জেলখানায় বন্দি করে রাখা হবে।
* চুরির শাস্তি। ডান হাত গিঁঠ থেকে কর্তন করা।
* ব্যভিচার কারীরা যদি অবিবাহিত হয়, তাহলে একশত বেত্রাঘাত, আর যদি বিবাহিত হয়, তাহলে প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা করা।
* ব্যভিচারের আপবাদের শাস্তি। আশিটি বেত্রাঘাত।
* মদ্যপানের শাস্তি। আশিটি বেত্রাঘাত।
(২) আর, যে সমস্ত আপরাধে বান্দার হককে শরীয়তের বিচারে প্রবল ধরা হয়েছে সেগুলোর শাস্তিকে বলা হয় ‘কেসাস’। শরীয়তের পরিভাষায় কেসাস বলাহয়, হত্যা এবং আঘাতের সে শাস্তিকে, যা সমতা ও পরিমাণের প্রতি লক্ষ্য রেখে বিধান করা হয়।
(৩) উল্লিখিত দুই প্রকার আপরাধ ছাড়া অবশিষ্ট অপরাধসমূহের শাস্তির কোন পরিমাণ নির্ধারণ করেনি শরীয়ত বরং বিচারকের বিবেক-বিবেচনা ও তার অভিমতের উপর ছেড়ে দিয়েছে । এমন আপরাধ সম্পর্কিত শাস্তিকেই শরীয়তের পরিভাষায় তা’যীরাত বা দÐবিধি বলাহয়।
দÐগত শাস্তিকে লঘু থেকে লঘুতর, কঠোর থেকে কঠোরতর এবং ক্ষমাও করা যায়। এব্যাপারে বিচারকদের ক্ষমতা অত্যন্ত ব্যাপক। কিন্তু হুদুদের বেলায় কোন সরকার , শাসনকর্তা অথবা বিচারকই সামন্যতম পরিবর্তন , লঘু অথবা কঠোর করার অধিকার রাখে না। স্থান ও কাল ভেদেও এতে কোন পার্থক্য হয় না এবং কোন শাসক ও বিচারক তা ক্ষমাও করতে পারে না।
এবার আসা-যাকা ধর্ষণের শাস্তি ব্যাপারে:
ধর্ষকের দ্বারা দুইটি অপরাধ সংঘটিত হয়।
১. ধর্ষকের দ্বার জোর পূর্বক যিনা বা ব্যভিচার সংঘটিত হয়। ২. (فساد فی الارض) অর্থাত ধর্ষকের দ্বারা পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি।
ধর্ষকের দ্বার জোর পূর্বক যিনা বা ব্যভিচার সংঘটিত হওয়ার কারণে তাকে-
১. সে যদি অবিবাহিত হয়, তাহলে একশত বেত্রাঘাত। ২.আর যদি বিবাহিত হয়, তাহলে প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা করা।
কিন্তু ধর্ষকের দ্বারা তো শুধু যিনা বা ব্যভিচারই সংঘটিত হয়নি তার দ্বার ‘ফাসাদ ফিল র্আদ’ হয়েছে তাই তার শাস্তি হবে নি¤েœ বর্ণিত আয়াতের অনুযায়ী।

﴿إِنَّمَا جَزَاءُ الَّذِينَ يُحَارِبُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَسْعَوْنَ فِي الْأَرْضِ فَسَادًا أَن يُقَتَّلُوا أَوْ يُصَلَّبُوا أَوْ تُقَطَّعَ أَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُم مِّنْ خِلَافٍ أَوْ يُنفَوْا مِنَ الْأَرْضِ ۚ ذَٰلِكَ لَهُمْ خِزْيٌ فِي الدُّنْيَا ۖ وَلَهُمْ فِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ﴾
যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে সংগ্রাম করে এবং দেশে হাঙ্গামা সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলীতে চড়ানো হবে অথবা তাদের হস্তপদসমূহ বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটি হল তাদের জন্য পার্থিব লাঞ্ছনা আর পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শান্তি।(সূরা আল-মায়েদা;৩৩)
ধর্ষণ বন্ধ হবেই হবে, যদি ওহির আইন বাস্তবায়ন হয়!
আজকে স্কুল-কলেজে রাস্তা, হাটে-ঘাটে সর্বত্ত ধর্ষন বিরোধী শ্রোগান শোনা যাচ্ছে এবং বহুমুখী প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিও জানানো হচ্ছে। কিন্তু কোন মুসলমান এ কথা বলছে না যে ধর্ষককে আল-কোরআনে বর্ণিত শাস্তির আওতার আনতে হবে।
আল-কোরআনের শাস্তি বাস্তবায়িত হোক ধর্ষকের জন্যে:
আল্লাহর শাস্তি বাস্তবায়িত হলে ধর্ষকের পাশবিক শক্তি ভেঙ্গে চুরমাচুর হয়ে যাবে। ধর্ষকের মনে পাপ থেকে দুরে থাকার ভয় সঞ্চার হবে। কেউ ভয়ে আপরাধ তো দুরের কথা অপরাধের চিন্তাও করতে পারবে না।
ধর্ষকের শাস্তি চাই; কিন্তু আসল শাস্তি চাই না কেন?
মূল কথা হলো ঈমানী চেতনা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। কুরআন ও সুন্নাহর সাথে আমাদের আমলগত সম্পর্ক একেবারে শূণ্যের কোঠায় শুধু আমাদের মুখের বুলিটা রয়েগেছে ‘আমরা মুসলিম’। আজকে মুসলমানদের আমলের অভাবে সারা পৃথিবী ক্ষতিগ্রস্ত। তাই বলতেই হয়: সারা দেহে ক্ষত হয়েছে তুলা লাগাবো কয় জায়গায়।
আসুন! ইসলামী আইন বাস্তবায়ন করে দেশ ও জাতিকে চির শান্তির ঠিকানার পথ দেখাই। হে আল্লাহ! আমাদের ঈমান, আক্বীদা ও আমল ঠিক করার তাওফীক দাও। আমীন।

কিতাবুল উসুল।

তাফসীরে কুরতুবী।

আহকামুল কুরআন।