নিজে পড়ুন ও অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন।
রাজ্জাক বিন ইউসুফের নাম আশা করি সবাই শুনেছেন। লা-মাজহাবীদের একজন বড় আলেম তিনি। তারাবীর নামাজ সংক্রান্ত আমি তার একটা
ভি.ডি.ও. দেখেছি। ভি.ডি.ও.টিতে তার ভাষা দেখে বুঝতে পারলাম সে ভালো ভাবে বাংলাও বলতে সক্ষম না। যে আলেম তার মাতৃভাষা ভালোভাবে বলতে পারে না, সে কখনও পরিপূর্ণ আলেম হতে পারে না, সে ত একজন বিকলঙ্গ আলেম। যাই হোক, সে তার ভি. ডি. ও. টিতে তারাবীর ব্যাপারে বলতে গিয়ে বার বার এ কথা বুঝাতে চাচ্ছেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহে রমাজানে ক্বিয়ামুল “ قيام الليل ” অর্থাৎ তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তেন। রমজানে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনও তারাবীহ পড়েন নি। বরং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমাজানে “ قيام الليل ” করেছেন।
দলীল স্বরূপ তিনি, আম্মাজান আয়েশা (রাঃ)-এর এ হাদীসটি তুরে ধরছেন।
حديث عَائِشَةَ عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمنِ، أَنَّهُ سَأَلَ عَائِشَةَ، كيْفَ كَانَتْ صَلاَةُ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فِي رَمَضَانَ فَقَالَتْ: مَا كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ وَلاَ فِي غَيْرِهِ عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً، يُصَلِّي أَرْبَعًا فَلاَ تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ، ثُمَّ يُصَلِّي أَرْبَعًا فَلاَ تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ، ثُمَّ يُصَلِّي ثَلاَثًا قَالَتْ عَائِشَةُ: فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ أَتَنَامُ قَبْلَ أَنْ تُوتِرَ فَقَالَ: يَا عَائِشَةُ إِنَّ عَيْنَيَّ تَنَامَانِ وَلاَ يَنَامُ قَلْبِي (أخرجه البخاري في كتاب التهجد في باب قيام النبي صلى الله عليه وسلم بالليل في رمضان وغيره)
অর্থ: হযরত আয়েশা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো যে, মাহে রমাজানে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামাজের ধরণ কিরূপ ছিল?
উত্তরে আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) বলনেল: রমাজান হোক, অথবা গায়রে রমাজান হোক, তিনি কখনও এগার রাকাতের বেশী পড়তেন না। দীর্ঘসময়ে সুন্দর ভাবে রসূল চার রাকাত পড়তেন। অতঃপর পূর্বের ন্যায় তিনি আবার চার রাকাত পড়তেন। এরপর রসূল তিন রাকাত বিতির পড়তেন।
(বোখারী শরীফ ২য়;৫৩; মাকঃ শাঃ)
সম্মানিত পাঠকগণ! এ হাদীসটি ইমাম বোখারীসহ সমস্ত মুহাদ্দিসীনে কেরামগণ
“ قيام الليل ” ক্বিয়ামুল লাইল অধ্যায়ে নিয়ে এসেছেন।আমি আপনাদের সামেনে আমরা উক্ত হাদীসটির ব্যাখ্যা তুলে ধরছি।
আমরা হাদীসটির ব্যাখ্যা দুইভাবে করতে পারি।
প্রথম ব্যাখ্যা: আমরা বললো যে, হাদীসটিতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের “ قيام الليل ” অর্থাৎ, তাহাজ্জুদের নামাজের বর্ণনা এসেছে। অর্থাৎ, এহাদীসটিতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান ও গায়রে রমাজানে তাহুজ্জুদ পড়তেন কিভাবে তার বর্ণনা আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) তুলে ধরেছেন এবং বলেছেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান হোক অথবা গায়রে রমজান হোক এগার রাকাতের বেশী কখনও পড়তেন না। উক্ত ব্যাখ্যা থেকে বোঝা যায়, তাহাজ্জুদের ব্যাপারে হাদীসটি একেবারেই পরিস্কার, কারণ তাহাজ্জুদের নামাজ বারো মাসই পড়া যায়, রমাজানে যেমন পড়া যায় গায়রে রমাজানেও তেমনই পড়া যায়।
দ্বিতীয়ত ব্যাখ্য: হাদীসটিতে ক্বিয়ামুল লাইল “قيام الليل” এর অর্থ যদি তারাবীহ নেয়া হয়, এবং বলা হয় যে, হাদীসটিতে আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তারাবীর নামাজের বর্ণনা দিয়েছেন।
তাহলে এ ব্যাখ্যা মতে হাদীসের অর্থ দ্বারায়- হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান ও গায়রে রমজানে তারাবীর নামাজ এগার রাকাতের বেশী পড়তেন না।
এ ব্যাখ্যা মেনে নিলে আমাদের বলতে হবে যে, তারাবীর নামাজ রসূল রমাজান ছাড়াও পড়তেন।(!) এমন আজগুবী ব্যাখ্যাই জ্ঞানপানী লা-মাজাহাবীরা করে থাকে, এবং বলে যে, এ হাদীসটিতেই রসূলের রমাজানের সালাতের কথা তুলে ধরা হয়েছে, এবং রসূল এগার রাকাতের বেশী কখনও পড়তেন না।
এরা “قيام الليل ” ক্বিয়ামুল লাইলকে তারাবীহ বলে চালিয়ে দিয়ে জাতীকে গোমরার দিকে ঠেলে দিতে চায়।
এখানে আমাদের একটি বিষয় স্মরণ রাখা দরকার তাহচ্ছে যে, তাহাজ্জুদের নামাজকে আরবীতে “قيام الليل ” বলা হয়। আর তারাবীর নামাজকে
“قيام رمضان ” ক্বিয়ামে রমাজান। এই ধূর্ত লা-মাজহাবীরা হক থেকে দূরে থাকার কারণে তাদের চোখে শুধু ক্বিয়ামুল লাইলের বর্ণনাগুলোই দেখতে পায়।
“قيام رمضان ” ক্বিয়ামে রমাজান বা তারাবীর বর্ণনা তাদের চোখে পড়ে না। পক্ষান্তরে হাদীস শরীফের সহীহ গ্রন্থসমূহে “قيام رمضان ” ক্বিয়ামে রমাজান অর্থাৎ তারাবীর নামাজের বিশদ বর্ণনা এসেছে। এ ব্যাপারে বোখারী শরীফের একটি বর্ণনার সারসংক্ষেপ আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।
)كتاب صلاة التراويح(
باب فضل من قام رمضان حدثنا يحيى بن بكير حدثنا الليث عن عقيل عن ابن شهاب قال أخبرني أبو سلمة أن أبا هريرة رضي الله عنه قال سمعت
رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول لرمضان من قامه ايمانا واحتسابا غفر له ما تقدم من ذنبه حدثنا عبد الله بن يوسف أخبرنا مالك عن ابن
شهاب عن حميد بن عبد الرحمن عن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول
الله صلى الله عليه وسلم قال من قام رمضان ايمانا واحتسابا غفر له ما تقدم من ذنبه قال ابن شهاب فتوفي رسول الله صلى الله عليه وسلم والامر على ذلك ثم كان الامر على ذلك في خلافة أبي بكر وصدرا من خلافة عمر رضي الله عنهما * وعن ابن شهاب عن عروة بن الزبير عن عبد الرحمن بن عبد
القاري أنه قال خرجت مع عمر بن الخطاب رضي الله عنه ليلة في رمضان إلى المسجد فإذا الناس أوزاع متفرقون يصلي الرجل لنفسه ويصلي الرجل
فيصلي بصلاته الرهط فقال عمر إني أرى لو جمعت هؤلاء على قارئ واحد لكان أمثل ثم عزم فجمعهم على أبي بن كعب ثم خرجت معه ليلة أخرى
والناس يصلون بصلاة قارئهم قال عمر نعم البدعة هذه والتي ينامون عنها أفضل من التي يقومون يريد آخر الليل وكان الناس يقومون أوله
অর্থ: হযরত আবু হুরাইয়া (রাঃ) বলেন: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রমাজান মাসে দন্ডায়মান হবে অর্থাৎ তারাবীর নামাজ পড়বে, তার অতীতের সমস্তগুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। ইবনে শিহাব জুহরী বলেন:( যিনি বোখারী শরীফের প্রসিদ্ধ একজন বর্ণনাকারী) অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইন্তিকার করেন, কিন্তু তারাবীর বিষয়টি এভাবেই থেকে যায়। অতঃপর হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর খেলাফতকালেও বিষয়টি এমনি থেকে যায়, এবং হযরত উমার (রাঃ)- এর খেলাফতের কিছু কাল পর্যন্ত। এরপর এবনে শিহাব জুহরী (রহঃ) বলেন: আব্দুর রহমান বিন আব্দুল ক্বারী বলেন: আমি রমাজান মাসে হযরত উমার (রাঃ)-এর সাথে মাসজিদে নববীতে গেলাম, দেখলাম সবাই নামাজরত অবস্থায়, কেউ একাএকাই, আবার অনেকে ছোট ছোট জামাতবন্দী হয়ে তারাবীর নামাজ আদায় করছেন। এ অবস্থা দেখে হযরত উমার (রাঃ) বললেন: আমার মনে চায়, এমন বিক্ষিপ্ত ভাবে তারাবী পড়ার চেয়ে, যদি সবাইকে জামাতের সাথে এক ইমামের পিছনে দাঁড় করিয়ে দিতে পারতাম তাহলে খুব সুন্দর হত!
অতঃপর আমিরুল মুমিনীন সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন এবং হযরত উবাই এবনে কা’ব কে ইমাম বানিয়ে সবাইকে তার পেছনে তারাবীহ পড়ার নির্দেশ দিলেন। (বোখারী শরীফ ২য়;২৫১; মাকঃশাঃ)
আমাদের স্মরণ রাখা উচিৎ যে, সাহাবায়ে কেরামের যে কোন সিদ্ধান্ত শরীয়তে গ্রহণীয়। উপরন্তু হযরত উমার (রাঃ) এর এ সিদ্ধান্ত সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম মেনে নিয়েছিলেন। এবং সেকাল থেকেই সর্বস্থানে সাহাবায়ে কেরামদের ঐক্যমতে তারাবীহ বিশ রাকাত হয়ে আসছে ।
জমাআ‘তে সাহাবার আমলকে যারা প্রত্যাখ্যান করে তারা কখন হেদায়েতের উপর আছে বলে দাবী করতে পারে না।
উল্লিখিত বর্ণানটি শুধু বোখারী শরীফেবই নয়, বরং প্রায় হাদীস গ্রন্থেই বিশুদ্ধ বর্ণায় এসেছে। এবং একাধিক সাহাবায়ে কেরাম থেকে হাদীসটি বর্ণিত।
উপরে উল্লিখিত “قيام الليل ” ক্বিয়ামুল লাইলের হাদীসটি যেমন হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তেমনি “قيام رمضان ” ক্বিয়ামে রমাজানের এ বর্ণনাটিও হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তারা আয়েশা (রাঃ)-এর “قيام الليل ” ক্বিয়ামুল লাইলের বর্ণনাটিই শুধু গ্রহণ করে আর “قيام رمضان ” ক্বিয়ামে রমাজানের বর্ণনাটি কৌশলে এড়িয়ে যায়! পাছে তারাবীর নামাজ যেন আবার বিশ রাকাত পড়তে না হয়!
আসল কথা হচ্ছে, তারা যে আমলগুলো করে না, সেগুলোকেই তারা জাইফ ও জাল হাদীস বলে চালিয়ে দেয়। বর্তমানে এটা তাদের স্বভাবে পরিণত হয়েছে। হে আল্লাহ! আমাদেরকে তোমার হাবীবের সঠিক পথে রেখো। আমীন।