শুক্রবার ১৪ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি ১৪ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আপরাধের সাজা ও শাস্তিকেই আমরা ‘দ-বিধি বলি। মৃত্যদ- শুরু করে জেল-জরিমানা যত প্রকার সাজা আছে আমরা ঢালাও ভাবে সবগুলোকেই দ-বিধি বলে থাকি। আসলে আপরাধ সম্পর্কিত সব শাস্তিকে ‘দ-বিধি’ বলে অভিহিত করা একেবারেই ভুল। একজন মুসলমানের এব্যাপারে কতটুকু করণীয় আসুন একটু জেনে নেই। ইসলামী শরীয়তে অপরাধের শাস্তিকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। (ক) হুদুদ (খ) কেসাস (গ) তা’যীরাত অর্থাৎ, দ-বিধি। আপরাধের দরুন অন্য মানুষের কষ্ট বা ক্ষতি হয়  এবং ¯্রষ্টার নাফরমানী করা হয়। সব রকম অপরাধের সাথেই ‘হক্কুল্লাহ’( আল্লাহর হক) এবং হক্কুল আবদ্ ( বান্দার হক) উভয়টিই বিদ্যমান থাকে। কিন্ত কোন কোন অপারাধে আল্লাহ্র হক আবার কোন কোন অপরাধে বান্দার হক প্রবল থাকে এবং এ প্রাবল্যের উপর ভিত্তি করেই বিধি-বিধান রচিত হয়েছে। (১) যে সমস্ত আপরাধে আল্লাহ্র হকের পরিমাণ প্রবল ধরা হয়েছে, সেগুলোর শাস্তিকে শরীয়তের পরিভাষায় এক বচনে ‘হদ’ আর বহুবচনে ‘হুদুদ’ বলা হয়। হুদুদ মাত্র পাঁচটি

(১) ডাকাতি।

(২) চুরি।

(৩) ব্যভিচার বা যিনা।

(৪) ব্যভিচারের আপবাদ।

(৫)  মদ্যপান।

* ডাকাতির শাস্তি।

(ক) ডাকাত দল; মালও লুন্ঠন করেছে, হত্যাও করেছে, তাহলে তাদের ফাঁসি দেওয়া হবে।

(খ) শুধু হত্যা করেছে মাল লুন্ঠন করেনি, তাহলে তাদের হত্যা করা হবে।

(ঘ) হত্যা করেনি শুধু মাল লুন্ঠন করেছে, তাহলে তাদের বিপরীত দিক থেকে হস্তপদসমূহ কেটে দেওয়া হবে।

(ঙ) হত্যাও করেনি মালও লুন্ঠন করেনি বরং মানুষদের শুধু ভয়-ভিতি দেখায়, তাদের নির্বাসন বা জেলখানায় বন্দি করে রাখা হবে।

* চুরির শাস্তি। ডান হাত গিঁঠ থেকে কর্তন করা।

* ব্যভিচার কারীরা যদি অবিবাহিত হয়, তাহলে একশত বেত্রাঘাত, আর যদি বিবাহিত হয়, তাহলে  প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা করা।

* ব্যভিচারের আপবাদের শাস্তি। আশিটি বেত্রাঘাত।

* মদ্যপানের শাস্তি। আশিটি বেত্রাঘাত।

(২) আর, যে সমস্ত আপরাধে বান্দার হককে শরীয়তের বিচারে প্রবল ধরা হয়েছে সেগুলোর শাস্তিকে বলা হয় ‘কেসাস’। শরীয়তের  পরিভাষায় কেসাস বলাহয়, হত্যা এবং আঘাতের সে শাস্তিকে, যা সমতা ও পরিমাণের প্রতি লক্ষ্য রেখে বিধান কর হয়।

(৩) উল্লিখিত দুইপ্রকার আপরাধ ছাড়া অবশিষ্ট অপরাধসমূহের শাস্তির কোন পরিমাণ নির্ধারণ করেনি; বরং বিচারকের বিবেক-বিবেচনা ও তার অভিমতের উপর ছেড়ে দিয়েছে । এমন আপরাধ সম্পর্কিত শাস্তিকেই শরীয়তের পরিভাষায় তা’যীরাত বা দন্ডবিধি বলাহয়।

দন্ডগত শাস্তিকে লঘু থেকে লঘুতর, কঠোর থেকে কঠোরতর এবং ক্ষমাও করা যায়। এব্যাপারে বিচারকদের ক্ষমতা অত্যন্ত ব্যাপক। কিন্তু হুদুদের বেলায় কোন সরকার , শাসনকর্তা  অথবা বিচারকই সামন্যতম পরিবর্তন , লঘু অথবা  কঠোর করার অধীকার রাখেনা। স্থান ও কাল ভেদেও এতে কোন পার্থক্য হয় না এবং কোন শাসক ও বিচারক তা ক্ষমাও  করতে পারে না।

সারকথা, কোরআন পাক যেসব অপরাধের শাস্তিকে আল্লাহর হক হিসেবে নির্ধারণ করে জারি করেছে, সেসব শাস্তিকে ‘হুদুদ’ বলে এবং যেসব শাস্তিকে বান্দার হক হিসেবে জারি করা হয়েছে সেগুলোকে ‘কেসাস’ বলা হয়। পক্ষান্তরে যেসব অপরাধের শাস্তি নির্ধারণ করেনি , সেজাতীয় শাস্তিকে বলা হয়, ত’যীর বা দন্ড। শরীয়তের এসমস্ত শাস্তি সম্পর্কে অনেকেই বেখবর। আর এগুলোর সাথে ঈমানেরও যথেষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। হুদুদ সম্পর্কে আপনার ধারণা যদি পরিস্কার না থাকে, তাহলে মহান আল্লাহ পাকের বিধানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন কি ভাবে? কেই কারো বিরুদ্ধে একটা মিথ্যা কথা বললেই আমরা সেটাকে আপবাদ বলে আখ্যায়ীত করি। আসলে এটাত অপবাদ নয়, মিথ্যা কথা, যা কবিরা গুনাহ। আর ‘অপবাদ’ হচ্ছে অমার্জনীয় অপরাধ, যা ক্ষমা যোগ্য নয়। হে আল্লাহ! আমাদের বোঝার তাওফীক দান কর। আমীন।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *